ইসলামে ভ্রমণের গুরুত্ব


ইসলামে ভ্রমণের গুরুত্ব
-সাইফুল ইসলাম মিঠু
পাঠক, আপনাকে ভ্রমণের প্রতি উৎসাহিত করে তোলা-ই আমার এ লেখার মূল উদ্দেশ্য। প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক তথা কর্মজীবনের দায়দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বেশ ক্লান্ত, শ্রান্ত ও অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন। ঠিক তখনই মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি আল্লাহর সৃষ্টি অবলোকন করার মানসে মানুষ চাই কোথাও না কোথাও ঘুরে বেড়াতে। দেখতে চাই আল্লাহর সৃষ্টি নির্দশন। এছাড়াও বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আল্লাহ কুরআনের অনেক স্থানে মানুষকে তার সৃষ্টি ঘুরে ঘুরে দেখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছেন-
আল্লাহ বলেছেনঃ قُلْ سِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ بَدَأَ الْخَلْقَ ثُمَّ اللَّهُ يُنشِئُ النَّشْأَةَ الْآخِرَةَ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ -
অর্থাৎ ‘(হে রাসূল) আপনি বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম ’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ২০)
আল্লাহ আরও বলেছেনঃ
قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُمْ سُنَنٌ فَسِيرُواْ فِي الأَرْضِ فَانْظُرُواْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذَّبِينَ - هَـذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِينَ
অর্থাৎ ‘তোমাদের আগে অতীত হয়েছে অনেক ধরনের জীবনাচরণ। তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের পরিণতি কি হয়েছে। এই হলো মানুষের জন্য বর্ণনা। আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশবাণী।’ (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৭-১৩৮)
গবেষকগণ বলেন, পর্যটন হলো জ্ঞানসমুদ্রের সন্ধান। সুস্থ্য দেহ ও সুন্দর মন তথা শারীরিক ও মানসিক উন্নতির জন্য ভ্রমণ করা খুবই উপকারী।
শেখ শাদি র. বলেছেন- দুনিয়াতে দু’ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী-
১. ভাবুক বা চিন্তাশীল ব্যক্তি
এবং
২. দেশ সফরকারী ব্যক্তি।
প্রকৃত পক্ষে পর্যটন বা দেশ ভ্রমণের এ-ধারা হজরত আদম (আঃ) তথা পৃথিবীতে মানুষের আগমনের সূচনা কাল থেকে এখন পর্যন্ত অব্যহত রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা নবী ও রাসূলদের দেশ ভ্রমণের বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করার পাশাপাশি অধিকাংশ নবীদের বাস্তব জীবনে সফরের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। রাসূল (সা.) এর ইসরা বা মিরাজও এ ভ্রমণ বা পর্যটনের-ই অন্তর্ভূক্ত। তাইতো পৃথিবীর আদি থেকে অদ্যবধি ইতিহাসের পাতায় অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী, পণ্ডিত, নবী-রাসূলের নাম পাওয়া যায়, যাঁরা পৃথিবীর নানা প্রান্ত ভ্রমণ করে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। যার বিবরণ ও গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে স্বয়ং কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে।
ভ্রমণের উপকারিতাঃ
১. মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ও আত্মার প্রশান্তি লাভ
২. আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে ধারণা লাভ
৩. প্রাকৃতিক তথা জীব বৈচিত্রের স্বভাব-চরিত্রের সম্মুখ ধারণা অর্জন
৪. সৃষ্টির সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা অর্জন
৫. ভ্রমণ সঙ্গীদের সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন শক্তিশালী করণ
৬. সৃষ্টিজগৎ সম্পর্কে নানামুখী জ্ঞান অর্জন
৭. সর্বোপরি আল্লাহর হুকুম পালনের মাধ্যমে আল্লাহর পরিচয় লাভ ও নৈকট্য অর্জন।
ভ্রমণে করণীয়ঃ
১. মুসাফিরের সকল দোআ কবুল হয়, যিনি ভ্রমণ করেন তিনি-ই প্রকৃত মুসাফির
২. আল্লাহর সাহায্য কামনা করে ভ্রমণে বের হওয়া
৩. একাধিক ব্যক্তি এক সঙ্গে ভ্রমণ করলে একজনকে দলনেতা বাঁনানো, এটা কুরআন সুন্নাহর সরাসরি পদ্ধতি
৪. ভ্রমণে ইবাদতের নিয়ম কানুন জেনে নেয়া, কসর পদ্ধতির বিষয়ে জ্ঞান রাখা
৫. রাস্তার হক তথা পর্দা মেনে চলা
৬. অবৈধ ও গর্হিত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা
৭. সর্বোপরি দর্শণীয় স্থান সমূহ দেখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। (আলহামদুলিল্লাহ, সুবহানআল্লাহ মুখে উচ্চারণ করা)
ভ্রমণে বর্জণীয় বিষয় সমূহঃ
ক) রুচি বহির্ভূত পোশাক পরিহার করা
খ) বৈধ অভিভাবক ছাড়া ভ্রমণে বের না হওয়া
গ) ভ্রমণে অপচয় না করা
ঘ) নিষিদ্ধ ও অবৈধ অশ্লীল কথা-বার্তা, আচার-আচরণ পরিহার করা
ঙ) আল্লাহর নির্দশন বহন করে তথা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধনকারী জিনিস নষ্ট না করা
চ) ফুল, গাছের পাতা, পথে ময়লা ছুড়ে না ফেলা
ছ) সব ধরনের অনিষ্ট হতে আল্লাহর নিকট পানাহ চাওয়া।
ভ্রমণ কালে অঙ্গীকার হোক এটাই যে, আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টি সম্পর্কে যে বিবরণ দিয়েছেন তা বাস্তবে নিজ চোখে দেখে ও অবলোকন করে আপনার ঈমান ও আমলকে মজবুত করা। দৈহিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা। ভ্রমণের মাধ্যমে কুরআন ও সুন্নাহর আলো ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া। আল্লাহ তাআলা ভ্রমণেও মানুষকে উত্তম কথা ও কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
০৪ নভেম্বর ২০১৮খ্রি.
ভোর ৪:২০টায়

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

"এক নজরে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির" "Bangladesh Islami Chhatrashibir at a Glance"

ড্রাফটিং Drafting LLB Fainal 8th part

একজন আলেমের পদস্খলন- একটি জনগোষ্ঠীর অধঃপতন